কিভাবে বিডিও হবেন - কিভাবে BDO হত পারব, WBCS পরীক্ষায় পাস করার কৌশল - hinglishmejano.com
কিভাবে বিডিও হবেন – কিভাবে BDO হত পারব, WBCS পরীক্ষায় পাস করার কৌশল
December 8, 2021 by HMJ
সরকারি চাকরির গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। আগেকার দিনে সরকারি চাকরির চাহিদা এখনকার মত ছিলনা। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সাথে সাথে রাজ্য সরকারি চাকরির চাহিদা কম নয়। এরমধ্যে পুলিশ বা প্রশাসনিক বিভাগের চাকরির চাহিদা অনেক বেশি। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ বা প্রশাসনিক বিভাগের চাকরি অর্থাৎ আইপিএস বা আইএএস অফিসার হওয়া যায় তেমনি রাজ্যস্তরে প্রশাসনিক বা পুলিশ বিভাগের চাকরি রয়েছে। BDO বা Block Development Officer পদের চাকরি পেতে চাইলে ভারতের রাজ্য সরকারের PSC আয়োজিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
বিডিও কিভাবে হওয়া যায়How to become a BDO
পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভাগের চাকরি পেতে চাইলে PSC আয়োজিত WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যস্তরের পরীক্ষা গুলোর মধ্যে WBCS পরীক্ষা একটু কঠিন হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির জন্য UPSC এর মাধ্যমে যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হয় রাজ্যস্তরের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা প্রায় একই রকম কিন্তু রাজ্যের পরীক্ষায় কিছু কম নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষা কেন্দ্রের UPSC আয়োজিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার থেকে কিছুটা সহজ। কিন্তু রাজ্যের অন্যান্য চাকরির থেকে অনেক কঠিন। তাই ব্লক বা সাবডিভিশনের প্রশাসক হতে চাইলে কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকে লক্ষ্য স্থির করা উচিৎ।
সাধারণ মেধার ছাত্ররা কি বিডিও হতে পারে ?
সাধারণ মেধার ছাত্ররাও WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। তারাও BDO হতে পারে। পরিশ্রম করতে হবে, নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। সাধারণ মেধার ছাত্রছাত্রীরাও বিডিও হওয়ার জন্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করেছে। তারা তাদের কঠোর পরিশ্রমের দ্বারাই লক্ষ্য পূরণ করেছে। তাই সাধারণ মেধার ছাত্ররাও বিডিও বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার হতে পারে। তারা এর প্রমাণ রেখেছে।
ভারতে প্রশাসনিক বিভাগে দুই ভাবে চাকরি হয়ে থাকে। একটি রাজ্যস্তরে অন্যটি কেন্দ্রীয় স্তরে। রাজ্যস্তরের প্রশাসনিক বিভাগের পরীক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে সেই রাজ্যের সিভিল সার্ভিস বিভাগ বা PSC বা পাবলিক সার্ভিস কমিশন। রাজ্যস্তরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রশাসনিক বিভাগে প্রথমে জয়েন্ট বিডিও হওয়া যায়। এর পর পদোন্নতি হয়ে বিডিও এমনকি এসডিও হতে পারে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস বা WBCS পরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা গুলোর মধ্যে একটি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাইলে খুবই পরিশ্রম করতে হয়। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে A, B, C এবং D এই চারটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন পদের অফিসারদের নিয়োগ করা হয়। BDO বা Block Development Officer এটি ‘A’ গ্রুপের পদ প্রার্থীর জন্য। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে বিডিও অর্থাৎ ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার হবেন ?
কিভাবে BDO হওয়া যায় – ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার কিভাবে হবেন ?
বিডিও হতে চাইলে কলেজের স্টাডি চলাকালীন প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে গ্রাজুয়েশন করার পরে লক্ষ্য স্থির রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করলেই WBCS অফিসার হতে পারবেন। এখানে WBCS অফিসার বলতে বিডিও হওয়ার কথা বলছি। WBCS পরীক্ষা দিয়ে চারটি গ্রুপে অফিসার নিয়োগ করা হয়। ‘A’ গ্রুপে যারা পাস করে তাদেরকে প্রশাসন স্তরের অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এই স্তরের সর্বোচ্চ পদ বিডিও।
বিডিও হতে চাইলে ক্লাস Eleven অর্থাৎ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার আগে থেকে এর প্রস্তুতি নেওয়া সবচেয়ে ভালো। সেই সময় একাদশ শ্রেণীতে কোন্ বিষয় নিয়ে ভর্তি হলে WBCS অফিসার হওয়ার জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে তা ঠিক করতে পারবেন। WBCS পরীক্ষায় Subject নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সঠিক বিষয় নির্বাচন এই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এক ধাপ এগিয়ে রাখে।
যদি কারও কেবলমাত্র প্রশাসনিক বিভাগে চাকরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে Art বা কলা শাখা নিয়ে পড়ার পরামর্শ দিতে চাই। তার কারণ আর্টসের বিষয়গুলো থেকে বিশেষ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। এর আরেকটাও সুবিধা আছে তাহল Arts এ পড়ার চাপ তুলনা মূলকভাবে কম থাকে। তাই কলা বিভাগে পড়লেই এই পরীক্ষায় অনেক সুবিধা পাবেন।
অনেকেই বিডিও হওয়ার জন্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি মাধ্যমিক লেভেল থেকেই নিয়ে থাকে। তাদের পরিবার থেকেই সচেতন করে দেয় যে তাকে প্রশাসক হতে হবে। তাই তাদের ছেলে মেয়েদের ছোট থেকেই প্রস্তুত করে তুলে। তবে বেশিরভাগ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন করার সময় থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
অনেকের মনে হতে পারে যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের বলতে চাই আপনার যদি ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দেওয়ার বয়স থাকে তাহলে কিছুই দেরি হয়নি। আপনি এক থেকে দুই বছরের প্রস্তুতি নিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে আপনাকে এই এক দুই বছর প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশোনা করতে হবে।
BDO এর জন্য WBCS পরীক্ষার পদ্ধতি গুলি কি কি
অনেকেই মনে করে যে, সে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্য নয় । কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে। অনেক সাধারণ যোগ্যতার ছেলে মেয়েরা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার হয়েছে। আসলে বিডিও বা ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস এর যেকোন পরীক্ষায় পাস করতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং তার সাথে ধৈর্যও ধরতে হবে। অনেক বিডিও বা WBCS Officer আছে যারা বার বার চেষ্টা করে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তাদেরকে দেখেও শিক্ষা নিতে পারেন। এবার আলোচনা করব সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার আবেদন করার যোগ্যতা, সিলেবাস , বেতন ইত্যাদি সম্পর্কে।
WBCS পরীক্ষা তিনটি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথমে প্রিলিমিনারি ( Preliminary Exam ) পরীক্ষা, তারপর Main এবং শেষে ইন্টারভিউ হয়ে থাকে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ( Preliminary Exam ):
প্রাথমিক বা প্রিলিমিনারি 400 নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। দুটি পেপারের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রত্যেক পত্রে 200 নম্বর করে দুটি পত্রে মোট 400 নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এতে দু ঘন্টা করে 4 ঘন্টা সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। সিভিল সার্ভিসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অবজেক্টিভ মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন হয়ে থাকে। কমপ্রিহেনশন skill থেকে প্রশ্ন হবে। এই পরীক্ষা পাস করার পর মেন পরীক্ষায় বসতে পারবে।
মেন পরীক্ষা ( Main Exam ):
Main পরীক্ষায় মোট ছয়টি পেপার থাকে। এই পরীক্ষা অনেক কঠিন হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বর্ণনামূলক উত্তর দিতে হয়।
এই পরীক্ষায় যে বিষয় থেকে প্রশ্ন হবে তাহল ভারতের ইতিহাস, ভারতের জাতীয় আন্দোলন এবং ভারতের সংস্কৃতি, ভারতের জনসংখ্যা বিশ্বের ভূগোল, ভারতের ভুগোল, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কারেন্ট এফেয়ার্স, ভারতের অর্থনীতি, ভারতের রাজনীতি, ভারতের সংবিধান ইত্যাদি বিষয়ে।
সাক্ষাৎকার ( Interview ):
Main পরীক্ষা পাস করার পর ইন্টারভিউ দিতে হয়। এই পরীক্ষায় কয়েকজন পরীক্ষক মিলে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে। তারা প্রার্থীকে অনেক জটিল প্রশ্ন করে থাকে। এই পরীক্ষায় প্রার্থীর মেধার টেস্ট নেওয়া হয়। এই পরীক্ষায় পাস করার পর শেষে ট্রেনিং দেওয়া হয়।
WBCS পরীক্ষায় বসার জন্য কত বয়স হতে হবে
বিডিও হওয়ার পরীক্ষায় বসার জন্য বয়স হতে হবে 21 থেকে 35 বছর। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য বয়সের অন্তিম সীমা 30 বছর। ওবিসি প্রার্থীদের বয়সের অন্তিম সীমা 33 বছর এবং তপসিলি প্রার্থীদের বয়সের শেষ সীমা রাখা হয়েছে 35 বছর।
WBCS পরীক্ষায় বসার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি ?
BDO হতে চাইলে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাধারণ স্নাতক হলেই হবে। উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে কোন অসুবিধা নেই। সাধারণ স্নাতক, ডাক্তার থেকে ইঞ্জিনিয়ার যেকেও এই পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্য। শেষ বছরের পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু রেজাল্ট বের হয়নি তারাও আবেদন করতে পারেন ।
ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার হওয়ার জন্য WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন?
বিডিও হতে চাইলে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এটি পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে কঠিন পরীক্ষা গুলোর মধ্যে একটি। তাই প্রস্তুতিও পুরোদমে চালাতে হবে। BDO হওয়ার জন্য ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। প্রতিদিন 7 ঘন্টা থেকে 10 ঘন্টা পড়াশোনা করার মানসিকতা থাকতে হবে।
কেবলমাত্র সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা করলেই হবে না, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি বুদ্ধমত্তার পরিচয় দিতে হবে। Current Affairs, GK এই বিষয়গুলোর সাথে আপডেট থাকতে হবে। Current Affairs এর জন্য প্রতিদিন news paper পড়তে হবে। GK এর জন্য ভালো লেখকের জিকে বই পড়তে হবে।এই গুলো ছাড়া রাজনীতি, খেলাধুলা, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে।
বিশষভাবে কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। তাহল আর্থিক ও সামাজিক বিকাশ, ভারত এবং বিশ্বের ভূগোল, ভারতীয় ইতিহাস এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আন্দোলন , দেশের এবং আন্তর্জাতিক current affairs, ভারতের রাজতন্ত্র এবং গভর্নর, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি।
বিডিও বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের বেতন কত
WBCS অফিসারদের পদ অনুযায়ী বেতনের তারতম্য আছে। অভিজ্ঞতা এবং পোস্ট অনুযায়ী বেতন নির্ধারিত আছে। একজন WBCS অফিসার বেতন ছাড়াও অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। নিচে পদ অনুযায়ী বেতনের তারতম্য হয়ে থাকে।
একজন WBCS অফিসারের অভিজ্ঞতা এবং পদ অনুযায়ী বেতনের পার্থক্য রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে একজন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের প্রতি মাসে মূল বেতন 9,300 টাকা থেকে শুরু করে 34,800 টাকা । গ্রেড পে 4,800 টাকা।
পরিশেষে:
কিভাবে BDO হওয়া যায় ? এই আর্টিকেলটিতে বিডিও সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। WBCS অফিসার হতে চাইলে ধৈর্য এবং অধ্যাবসায় এর প্রয়োজন। খুবই বুদ্ধিমান ছেলেমেয়েদের সাথে কম্পিটিশন করতে হয় তাই এই পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিতে হবে কঠোর ভাবে। প্রচুর hardworking করতে হবে। অনেক WBCS অফিসার আছে যারা তিন চারবার পরীক্ষা দেওয়ার পর তবেই সফলতার মুখ দেখেছে। তাই একবার অথবা দুবার পরীক্ষায় ফেল করলেও হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আবার পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আশা করি কিভাবে BDO হব ? আর্টিকেলটিতে আশা করি বিডিও সম্পর্কে বোঝাতে পেরেছি। এই পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের শেয়ার করবেন। WBCS সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করবেন।
ধন্যবাদ
Comments
Post a Comment